মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

মা'দের এই আর্তনাদের শেষ কোথায় ?

মো: শফিকুল ইসলাম জয়

সিলেট ডেস্ক :
যারা এখনো ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত নির্মম বাস্তবতা থেকে বলতে পারি বেশির ভাগ ভাইদের মায়েরা রাতে ঘুমাতে পারে না। ছেলের চিন্তায়। কয়েকদিন পরে পরে লাশের মিছিলের খবর গুলো মায়েদেরকে খুব বেশি কাদায়। মায়েরা চায় বায়ান্নের মতো ছেলেদেরকে যুদ্ধে পাঠাতে, সোনার বাংলা গড়ার যুদ্ধে।

কিন্তু শত্রুপক্ষের ভুলেট দেহকে ছুতে না পারলে ও, যখন নিজদলের মীরজাফরদের ভুলেটের আঘাতে নিঃশ্বেষ করে দেয় তাজা একটি প্রান তখন অসহায়ের মতো কান্না আর হাজারো অভিমান নিয়ে রাজনীতিকে গালিগালাজ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না মায়ের। যখন রাছেল ভাই, রশিদ ভাই,অরুন দা'দের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে করা হামলার এক মাস,দুই মাস করে চলে যায় অনেক দিন। কিন্তু আমার ছেলের উপর হামলাকারীদের উপযুক্ত বিচার হয়েছে বলে মনকে শান্তনা দিতে পারে না অনেক মা বাবাই।

অভিমান যেন তখন দ্বিগুণ হতে থাকে। আসলে জগৎ দার এই নির্মম হত্যার সঠিক বিচার যদি তরুন প্রজন্ম দেখতো তাহলে এতদিনে আরও হাজারো জগৎ দা এই সিলেটের মাঠিতে তৈরী হতো। সবমিলিয়ে প্রতিদিনই মায়ের কাছে রাজনীতি করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে আসা ছেলেটা দিনশেষে যখন রাজনীতির মাঠে চলে যায়,তখন মায়েদের হতভাগ হয়ে করুনার শাথে আল্লাহর কাছে ছেলের জীবন ভিক্ষা চাওয়া ছাড়া আর কিচ্ছুই থাকে না। অনেক সময় বিবেকের আদালতে বিচার করে মাকে আর কাঁদাতে মন চায় না। বাস্তবতা, মায়ের কান্না, পরিবারের কথা মানতে গিয়ে যখন মনটা ধীর স্থির করি ছাত্ররাজনীতির সমাপ্ত ঘটিয়ে পরিবারকে একটু খুশি করবো। কয়েকদিন এরিয়ে থাকার পর যখন রাস্তার পাশে জয় বাংলা স্লোগানের কোন মিছিল কানে চলে আসে তখন আর কেন জানি নিজেকে আটকে রাখতে পারি না, দৌড়ে গিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে দেই যৌবনের ভালোবাসার সংগঠনের প্রতি। সত্যিকার অর্থে ছাত্ররাজনীতি নিজের দেহটার সাথে মিশে যাওয়ায় কোন কিছু কুলিয়ে উঠতে পারি না।

নিজ সংগঠনের ঐতিহ্য,সংগ্রাম,সাফল্য নিয়ে যুক্তিতর্কে হারাতে পারবে না কেউই, কিন্তু যদি কেউ বলে মাছুম,মিয়াদ, তানিম,জাহিদরা কিভাবে হত্যা হলো ? কে মারলো তাদের ? কেন এই হত্যা ? তখন মাথা নত করে চলে আসতে হয় তর্কের টেবিল থেকে। বাবার কথা তো বলাই হলো না! শত বারনের পর যখন দেখা যায়, ছেলেটা রাজনীতির মাঠ ছাড়ছে না। তখন অভিমানের রাস্তা বেছে নিয়ে বাবা প্রতিদিনই অগোচরে কান্না করে চোখ ভেজান। আমরা ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত প্রত্যেকটা কর্মির পরিবার ছেলেদের কাছ থেকে ভবিষ্যতের ভালো কিছু আশা করে। কিন্তু,নিমিষেই গুলির ভুলেটে,নাহয় ধারালো অস্ত্রের নিমিত্তে স্বপ্নগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।

রাতের আধারে ঘুমকে ছুটি দিয়ে অনেকবার চিন্তা ভাবনার পর ও কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর গুলো মিলাতে পারছি না। মা বাবার এই কান্না, একটার পর একটা লাশের মিছিল,পরিবারের আর্তনাদ, আত্নীয় স্বজন বন্ধুমহলের সকলের চোখ ভেজানো আহাজারি পারবে কি মায়ের বুক খালি না করে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে ? শেষ হবে কি কখনো এই অপরাজনীতির লাশের মিছিল ? কখনো কি মা তার ছেলেকে লাল সবুজের পতাকা হাতে দিয়ে বলবে যা বাবা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তৈরী করতে ছাত্রলীগের ছায়াতলে যা ? পরিবার কি গর্ব করবে যে আমার ছেলে / ভাই ছাত্ররাজনীতি করে ? আমরা কি হুংকার দিয়ে বলতে পারবো যে আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না ? তৃনমূল থেকে কেন্দ্রীয় সকল নেতৃবৃন্দের কাছে উপরের প্রশ্নগুলো উৎসর্গ করলাম! পরিশেষে, আমি আমার নিজস্ব মতামত থেকে বলতে পারি সবশেষে রাজনীতি কখনোই খারাপ হতে পারে না। খারাপ তো গুটিকয়েক রক্তপিপাসু, স্বার্থের পিছনে দৌড়ানো, কাপুরুষরা।

শেয়ার করুন


0 comments: